অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা
আমাদের মধ্যে অনেকে আছি যারা অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানি না।তাই
আজকেরে আর্টিকেলটিতে অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা এবং অ্যালোভেরার রস খাওয়ার
উপকারিতা এছাড়াও অ্যালোভেরা সম্পর্কিত সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব।
আজকেরে আর্টিকেলটি থেকে আমরা জানতে পারবো অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা,
অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা, অ্যালোভেরার রস খাওয়ার উপকারিতা, চুলের যত্নে
অ্যালোভেরার উপকারিতা, অ্যালোভেরা মুখে মাখলে কি হয় এবং অ্যালোভেরা খাওয়ার
নিয়ম এই সমস্ত তথ্য জানতে আমাদের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
পোস্টসূচিপত্রঃ অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা
অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা
আপনি যদি প্রতিনিয়ত অ্যালোভেরা খেয়ে থাকেন অথবা আপনি যদি এলোভেরা খেতে পছন্দ
করেন। তাহলে আপনার অবশ্যই এলোভেরা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জানা উচিত। কারণ
অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে না জানলে আপনার শরীরের অনেক ক্ষতি হতে
পারে।
অ্যালোভেরা অনেক জনপ্রিয় একটি নাম। প্রায় পাঁচ হাজার বছর থেকে অ্যালোভেরা
বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ সারাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম,
আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিং, ফলিক অ্যাসিড, অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন এ,
ভিটামিন বি -6 ও ভিটামিন বি -2।অ্যালোভেরা স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি চুলের
যত্নেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সাধারণত ডায়াবেটিস, হেপাটাইটিস, পাকস্থলের আলসার, এজমা ইত্যাদি চিকিৎসায়
অ্যালোভেরা ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে এবং ওজন
নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অ্যালোভেরা অনেক উপকারী। অনেকে আমরা জানি না এই উপকারী
অ্যালোভেরার কিছু খারাপ দিয়ে রয়েছে বা অপকারিতাও রয়েছে।
চিকিৎসকদের মধ্যে অ্যালোভেরার জেল তখনই নিরাপদ যখন ওষুধ বা জেল হিসাবে চামড়ায়
প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে অ্যালোভেরার হলদে যে রসালো পদার্থ বের
করা হয় তার সঙ্গে অ্যালোলেটেস নামে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা শরীরের
জন্য খুবই ক্ষতিকর। অ্যালোলেটেস যদি খাওয়া হয় তাহলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ
হতে পারে।
অতিরিক্ত অ্যালোভেরা খেলেও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন তোকে এলার্জি হতে পারে,
রক্তচাপ কমে যেতে পারে, গর্ভধারণে জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত
অ্যালোভেরা রস খেলে কিডনি নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে। অতিরিক্ত অ্যালোভেরা রস খেলে
পাকস্থলীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
অ্যালোভেরার পাতায় থাকা অ্যালোলেটেস দীর্ঘদিনের ব্যবহারের ফলে ডায়রিয়া,
প্রস্রাবের রক্ত, পটাশিয়ামের ঘাটতি, পেশি দুর্বলতা এবং হার্ট অ্যাটাক এর মত
সমস্যা হতে পারে। এর ফলে অ্যালোভেরা সবুজ পাতাকেই নিরাপদ মনে করেন চিকিৎসকরা।
পাতাতে যদি একটু হলদে ভাব এসে যায় বা পুরাতন হয়ে যায় তাহলে তা বর্জন করা উচিত।
ত্বকের যত্নে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে অ্যালোভেরা খেতে পারেন। তবে অ্যালোভেরা
খাওয়ার আগে আপনার জেনে রাখা উচিত যে কতটুকু এলোভেরা খাওয়া উচিত। অ্যালোভেরা
যেমন উপকারী তেমন এর ক্ষতিকর দিক রয়েছে তাই আমরা সবাই অ্যালোভেরা সঠিক মাত্রায়
সেবন করব।
অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা
শরীরকে যদি ঠিক রাখতে চান তাহলে অ্যালোভেরা খাওয়া শুরু করে দিন। কারণ গবেষণায়
পাওয়া গেছে যে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এবং যৌবন ধরে রাখতে অ্যালোভেরার কোন
বিকল্প নেই । এছাড়াও অ্যালোভেরা খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই
আজকের এই আর্টিকেলটিতে অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানব।
টক্সিনঃ শরীরে টক্সিন এর মাত্রা যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে শরীরের প্রতিটি
অঙ্গের কর্ম ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ফলে নানা রকমের রোগ হয়। অ্যালোভেরা
খেলে দেহের এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বৃদ্ধি হতে থাকে ফলে দেহের প্রতিটি কোণায়
জমতে থাকা টক্সিন উপাদান গুলো বের হয়ে যেতে শুরু করে। এর ফলে আপনার শারীরিক
শক্তি বৃদ্ধি হয় এবং আপনাকে আরো কর্মঠ করে তোলে।
হার্টঃ অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যালোভেরা খাওয়া মাত্রই দেহে
অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রভাব বেড়ে যায়। এর ফলে দেহের প্রতিটি অঙ্গের পাশাপাশি
হার্টের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি হতেও সময় লাগে না। এর সঙ্গে সঙ্গে রক্তে খারাপ
কোলেস্টলের মাত্র কমতে শুরু করে। ফলে হার্টের যেকোনো ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা
কমে এবং হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা ও দূর হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ সুস্থভাবে যদি অনেকদিন বাঁচতে চান তাহলে প্রতিনিয়ত
অ্যালোভেরা খেতে হবে। কারণ অ্যারবেলা খেলে দেহের সর্দি, কাশি থেকে শুরু করে ছোট
বড় অনেক ধরনের রোগের থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড় প্রতিনিয়ত অ্যালোভেরা খেলে
সংক্রামনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কামায়।
বয়সঃ অ্যালোভেরা রয়েছে প্রচুর পরিমাণের এ,বি এবং সি। ভিটামিন এ ত্বক
ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও অ্যালোভেরা ভিটামিন ই এবং বিটা কেরোটিন এর মতো
এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এর ফলে বয়সের সাপ দূর হয়। এর পাপাইন নামক উপাদান ত্বকের
মৃত কোষ দূর করে এবং স্থিতি স্থাপকতা বাড়িয়ে ত্বককে টানটান করে। এর ফলে আপনার
বয়স কম মনে হবে এবং আপনাকে তরুণের মত দেখা যাবে।
এছাড়া লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করে,হজম ক্ষমতার উন্নতি করে,বিভিন্ন পুষ্টির
ঘাটতিকে দূর করে এলোভেরা।গ্যাস্ট্রিক, আলছার সারাতে এলোভেরা খুবই উপকারী। প্রচন্ড
গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে অ্যালোভেরা খেলে শরীর অনেক ঠান্ডা থাকে। অ্যালোভেরা যৌন
উদ্দীপনা বৃদ্ধি ও ত্বক সুন্দর করে। তাই রোগ মুক্ত থাকতে এবং ত্বককে সুন্দর করতে
প্রতিনিয়ত অ্যালোভেরা খেতে পারেন।
চুলের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা
প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে অ্যালোভেরা ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক রোগ দূর করার জন্য।
অ্যালোভেরা যেমন আমাদের অনেক রোগ দূর করে দেয় এবং আমাদের ত্বককে সুন্দর করে।
তেমনি অ্যালোভেরা আমাদের চুলের যত্নেও অনেক ভালো কাজ করে। আজকের এই আর্টিকেলটিতে
জানব চুলের যত্নে অ্যালোভেরার কি উপকার করে।
আমরা চুলের সমস্যা নিয়ে অনেকে চিন্তিত। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা চুলে অনেক
কিছু ব্যবহার করে থাকলেও তাদের চুল রুক্ষ এবং সুষ্ঠু হয়ে থাকে তার সঙ্গে সঙ্গে
চলে অনেক খুশকি ও থাকে। আপনি যদি নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহার করেন তাহলে চুল ভিশন
নরম হয়ে যাবে এবং চুলের রুক্ষতা এবং সুস্মিতা দূর হয়ে যাবে।
এর সঙ্গে সঙ্গে চলে যদি খুশি থাকে তাহলে সেটাও আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে। অনেকের
মাথায় এলার্জি হয় এই এলার্জি দূর করার জন্যেও অ্যালোভেরা অনেক ভালো কাজ
করে।এলোভেরা চুল পড়া বন্ধ করে অ্যালোভেরাতে আছে ভিটামিন সি যা আমাদের চুল পড়া
রোধ করে।
অ্যালোভেরা মুখে মাখলে কি হয়
আমরা অনেকে আছি যারা অ্যালোভেরা খেয়ে থাকি শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য। আবার অনেকে
আছি যারা চুলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করি চুল ভালো রাখার জন্য। কিন্তু অ্যালোভেরা
ত্বকের যত্নেও অনেক উপকারী। আজকেরে আর্টিকেলটিতে বলবো অ্যালোভেরা মুখে মাখলে কি
হয়। ত্বকে অতিরিক্ত তেল থাকার কারণে বরুণের সমস্যা দেখা দেয় এই সমস্যা দূর করার
জন্য অ্যালোভেরা জেল দিনে দুইবার ব্যবহার করা উচিত।
এটি ব্যবহার করলে এই সমস্যা আস্তে আস্তে দূর হয়ে যায়। অ্যালোভেরা জেল ত্বককে
হাইডেটেড এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। ত্বকের পোড়া দাগ, ত্বকের যেকোনো কালো দাগ এবং
ক্ষত দূর করতে সাহায্য করে। এগুলো ছাড়াও এটি ত্বকের সংক্রমণ নিরাময় করে।
অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম
অ্যালোভেরা শুধু শরবত বানিয়ে খাওয়া যায়। প্রথমে অ্যালোভেরার ডগা থেকে
অ্যালোভেরা জেলটি বের করে নিন। জেলটি একটি গ্লাসের ভিতরে ডেলে নিয়ে চামচের
সাহায্যে নেড়ে নরম বা পেস্টের মতন করে নিন। সাথে ভিজিয়ে রাখা কিছু তোকমা দানা
বা লেবু রস দিতে পারেন। সবশেষে পানির সাথে লবণ মিশিয়ে খেয়ে নিন। আর যদি শরবত
মিষ্টি করতে চান তাহলে চিনি বা মধু মিশাতে পারেন। এই শরবত সকালে ঘুম থেকে উঠে
খালি পেটে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
অ্যালোভেরার রস খাওয়ার উপকারিতা
- অ্যালোভেরা রক্তচাপ কমায়, রক্তের কোলেস্টেরল এবং চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সাহায্য করে।
- অ্যালোভেরা মিনানের ও অ্যামিনো অ্যাসিড সহ নানা পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা হার ও মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে তোলে।
- দেহে ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশ করলে তা অপ্রসারণে সাহায্য করে।
- বিভিন্ন চর্মরোগ ও ক্ষত সারায় এটি অনেক সময় প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। অ্যালোভেরা দেহের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
-
অ্যালোভেরার-রস-খাওয়ার-উপকারিতা
- নিয়মিত অ্যালোভেরা রস পান করলে হজম শক্তি বাড়ে। পরিপাকতন্ত্রের নানা জটিলতা সারাতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় অ্যালোভেরা। এটিতে সাদা ব্লাড সেলস গঠন করে যা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে।
- নিয়মিত অ্যালোভেরা রস পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করলে এটি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এটি কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ওজন কমাতে সাহায্য করে।
শেষ মন্তব্যঃ অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা
অ্যালোভেরা একটি প্রাকৃতিক উপাদান হলেও অতিরিক্ত বা ভুলভাবে খাওয়া স্বাস্থ্যের
জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি পেটের সমস্যা, ডায়রিয়া, অথবা এলার্জি সৃষ্টি করতে
পারে। তাই, অ্যালোভেরা খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সুস্থ ও
নিরাপদ থাকার জন্য, মাত্রা মেনে এবং সঠিকভাবে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত।
অতিরিক্ত ব্যবহারের থেকে বিরত থাকা এবং সঠিকভাবে প্রয়োগ করা ভালো।
অভিষেক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url