শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়
শীতের সময় আমাদের ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে আর এইজন্যই অনেক মানুষ আছে কিভাবে শীতে
ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করবে এটা সম্পর্কে জানতে চাই। এছাড়াও শীতে
ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবে এটা সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। আজকে আমরা আপনাদেরকে
জানাবো কিভাবে শীতে আপনারা ত্বকের যত্ন নিবেন।আর জানতে হলে অবশ্যই আপনাকে পুরো
পোস্টটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুব মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
সারা বছরই ত্বকের যত্ন নিতে হয় তবে শীতকালে এর গুরুত্ব অনেক বেশি বেড়ে যায়।
কারণ শীতের আবহাওয়া আমাদের ত্বকের উপরে প্রভাব ফেলে এজন্য ত্বক হয়ে যায় শুষ্ক।
এর ফলে তোকে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তাই শীতে খুব ভালো করে নিজের ত্বকের
যত্ন নেয়াটা খুবই জরুরী।
পোস্ট সূচীপত্রঃ শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়
ভূমিকা
শীতকাল এলে আমাদের ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে ওঠে আর এই শীতের প্রথম ছাপটাই
পড়ে আমাদের ত্বকে। এ সময় ত্বকের চামড়া ফেটে যায় আর তা থেকে দেখা দিতে পারে
ব্রণ ও রেস আর এজন্যই শীতের সময় বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। আর এই শীতে ত্বক
ভালো রাখার জন্য আপনাকে প্রতিদিন মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। আপনাকে যে কোন
নামিদামি ব্র্যন্ডের প্রণাম কিনে ব্যবহার করতে হবে এমনটা নয়। আপনি চাইলে কিছু
ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন আমরা আমাদের পোস্টে ঘরোয়া উপায়ে ত্বকের
যত্ন নেওয়া সম্পর্কে জানাবো আশা করি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়
আমাদের ত্বকে কমবেশি সারা বছরই আমরা যত্ন নিয়ে থাকি কিন্তু শীতের সময় এর
গুরুত্ব অনেক বেশি বেড়ে যায়। কারণ শীতের আবহাওয়া অনেক শুষ্ক থাকে যার ফলে
আমাদের ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় চুলকানি ও এলার্জি এইধরনের সমস্যা দেখা
যায়। জন্য আমাদের উচিত শীতের সময় ঘরোয়া উপায়ে নিজের ত্বকের যত্ন নেওয়া আসুন
তাহলে জেনে নিই কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে যত্ন নেয়া যায়।
ঠান্ডা পানিতে গোসল করবেন না শীতের সময় অনেকেই ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করে।
তবে এই অভ্যাসটা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ শীতকালে ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে
ত্বক আরো বেশি শুষ্ক হয়ে পড়ে। সেজন্যই আমাদের শীতের সময় ঠান্ডা পানি দিয়ে
গোসল করা উচিত নয়। আর তার সাথে ত্বকে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের সেজন্য
আমাদের উচিত শীতের সময় হালকা গরম পানিতে গোসল করা। এসময় যদি আপনি হালকা গরম
পানিতে গোসল করেন তাহলে আপনার ত্বকের তাপমাত্রা ঠিক থাকবে এবং ত্বক ভালো থাকবে।
সানস্ক্রিম ব্যবহার
আমরা সাধারণত গরমের সময়ে সূর্যের তাপ থেকে নিজের ত্বককে বাঁচানোর জন্য
সানস্ক্রিম ব্যবহার করে থাকি। তবে শীতের সময়ও নিয়মিত আপনাকে সানস্ক্রিম
ব্যবহার করতে হবে। বাইরে বের হলে সানস্ক্রিম ব্যবহার করাটা খুবই জরুরী কারণ
শীতের সময়ে সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট থেকে আপনার ত্বকে বাঁচাতে সাহায্য
করবে। আর আপনি যদি নিয়মিত সানস্ক্রিম ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ত্বক রোদে
পুড়ে যাবে না।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে শসা
যাদের ত্বক অনেক বেশি তৈলাক্ত লাগে তারা চাইলে শসার রস ব্যবহার করতে পারেন।
শসা রসের সঙ্গে মুলতানি মাটি চন্দনের গোড়া দিতে হবে তারপর ভালোভাবে একটি
মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। মিশ্রণটি মুখে ও হাতে পায়ে ত্বকে লাগান তারপরে ১০
মিনিট রেখে দিন যখন শুকিয়ে যাবে তখন সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তাহলে
দেখবেন ত্বকের তৈলাক্ততা কেটে যাবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
ঘি
এতে রয়েছে ময়েশ্চারাইজিং উপাদান। এটি প্রতি রাতে ব্যবহার করলে মুখে হাতে
পায়ে মাখলে ত্বক নরম থাকে।
মধু
এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান। এটি সঙ্গে
এক চামচ মধু ও দুই চামচ ক্রিম পাউডার এক চিমটে হলুদ ভালো করে মিশিয়ে মুখে
মেখে নিন। এতে করে ত্বকের উজ্জ্বলতা দেখা দিবে এবং ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন
শীতে ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন
গোসল
মানুষ শীতকালে গরম পানিতে গোসল করে থাকে এই গরম পানির ফলে ত্বকে আরও শুষ্ক
দেখা যায়। কুসুম গরম পানিতে অল্প সময়ে গোসল শেষ করুন গোসলে অপেক্ষাকৃত কম
ক্ষারীয় সাবান ব্যবহার করা উচিত। শীতকালের সময় বেশি ক্ষারীয় সাবান ব্যবহার
করলে ত্বকের শুষ্কতা বেড়ে যায়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে। একজিমা সোরিয়াসিস ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে আছেন
তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অটামিল বা সি সল্ট নিতে হবে।
পোশাক
শীতের সময় আমরা বিভিন্ন রকমের পোশাক পড়ে থাকি। টাইফয়েড এবং সিনথেটিক পোশাক
ত্বকের শুষ্ক ও রুক্ষ করে এবং এলার্জির কারণ হয়ে থাকে। কাজেই আমাদের
আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক তন্তু দিয়ে তৈরি পোশাক পরিধান করতে হবে।
পলিয়েস্টার লিলেন নাইলন ইত্যাদি পরিহার করতে পারেন।
শীতে ত্বকে আদ্রতা ধরে রাখতে যা দরকার
শীতের সময় শুরু হয় আমাদের হাত-পা ফেটে যাওয়া ঠোঁট ফেটে যাওয়া। হাত ও পা
ফেটে যাওয়ার কারণে চুলকানিও হয়ে থাকে তাই আমাদের ত্বকে শুষ্ক হলে
পেট্রোলিয়াম জেলি অলিভ অয়েল বডি লোশন ব্যবহার করতে হবে। তবে সবচেয়ে উপকারী
হল প্রাকৃতিক অলিভ অয়েল শীতকালে যেহেতু আমরা পানি কম ব্যবহার করি সে কারণে
খোসপাঁচড়া বা চুলকানি রোগ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে ।
শীতে গায়ে রোদ লাগানো
শীতকালে আমাদের দরকার কিছুক্ষণ রোদে থাকা। এতে করে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ
ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ভিটামিন ডি এর ফলে ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ করে তোলে।
শীতে ত্বকের যত্নে এলোভেরা
অ্যালোভেরা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর
মত উপাদান এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কার্যকরী। তাছাড়া শীতকালে ত্বকের
অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে বেশিরভাগ মাত্রায় রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে ত্বক।
আসুন তাহলে জেনে নিই শীতে ত্বকের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম।
অ্যালোভেরা জেল ও লেবুর রসের ব্যবহার
এলোভেরার দুপাশের কার্ডটা যুক্ত অংশ কেটে ব্লেন্ডারে পিষে ফেলুন তারপর একটি
লেবুর রস বের করে তার সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটির ফ্রিজে এক থেকে দুই
সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে । মুখে গলা হাত-পা বিভিন্ন অংশের হালকা দাগ দূর
করতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন এ উপাদানগুলোকে
প্রাকৃতিক মাস্ক বলা হয় এবং এই মাস্কটি রোদের পোড়া ভাবও দূর করে থাকে।
এলোভেরা মুলতানি মাটি মধু লেবুর রস ব্যবহার
অ্যালোভেরা জেল ,মুলতানি মাটি, মধু ,লেবুর রস মিশিয়ে ঘন পেস্ট বানান। এই
মাস্কটি মুখে গলায় লাগিয়ে ১০ থেকে১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন। এই মাস্কটি সপ্তাহে একবার ব্যবহারে মুখে তৈলাক্ত সমস্যা দূর করে থাকে।
এলোভেরা ফেস সিরাম
অ্যালোভেরা ফেস সিরাম তৈরি করার জন্য আমাদের প্রয়োজন দুইটি উপাদান
উপাদানগুলো গোলাপজল ও ভিটামিন ই । এটি তৈরিতে প্রথমে একটি পাত্রে দুই টেবিল
চামচ অ্যালোভেরা জেল এবং পরিমাণ মতো গোলাপজল মিশিয়ে নিতে হবে। অতিরিক্ত বা
অল্প পরিমাণে গোলাপজল মেশাবেন না এতে করে পাতলা হয়ে যাবে ঠিকঠাক মতো হবে না
এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুলটি নিয়ে সেটি থেকে এক্সট্র্যাক্ট বের করে নিতে হবে।
এবং সেটি এই মিশ্রণে মিশিয়ে দিন উপাদানগুলো ভালো করে মিশিয়ে ফেস সিরাম তৈরি
করুন এই ফেস সিরাম টি মুখে লাগাতে হবে।
অ্যালোভেরা জেল নাইট ক্রিম
আমরা বাড়িতে বানানো এলোভেরা জেল সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করতে পারি। অ্যালোভেরা
জেল টি নাইট ক্রিম হিসেবে বেশ উপযোগী তাছাড়াও বাজার চলতি এলোভেরা জেল
ব্যবহার করতে পারেন ।রাতে শোওয়ার আগে ক্লিনজিং করে এবং টোনার ও
ময়শ্চেরাইজার লাগিয়ে অ্যালোভেরা জেল নাইট ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
শীতে ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল
শীতে ত্বক নরম ও কোমল রাখতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। ত্বককে উজ্জ্বল
করতে আপনার প্রতিদিন রূপচর্চার অংশ হিসেবে অলিভ অয়েল নিতে পারেন । এটি
দুর্দান্ত কাজ করে থাকে।ত্বক নরম ও কোমল রাখতে নরম। এবং কোমল করতে অলিভ
ওয়েলে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট এসেন্সিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড যা আমাদের ত্বকে
মাসাজ করলে তা ত্বককে নরম ও কোমল করে তোলে। এটির মাধ্যমে বজায় থাকে আমাদের
ত্বকের আদ্রতা এটি শুধু রক্ত সঞ্চালনই নয় বরং সে সঙ্গে পুষ্টিও পৌঁছে দিতে
কাজ করে। শীতে বাড়তি যত্ন নিতে ত্বকের ব্যবহার করতে পারেন অলিভ
অয়েল।
ত্বক উজ্জ্বল করতে
অলিভ অয়েল আপনার প্রতিদিনের রূপচর্চার একটি অংশ হিসেবে কাজ করবে। এটি ত্বকের
পোরসে জমে থাকা তেল ও ময়লা বের করে আনতে সহায়তা করবে। এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা
ধরে রাখতে চাইলে অলিভ অয়েল ব্যবহার অতি গুরুত্বপূর্ণ ।
মেকআপ রিমুভার
আমরা প্রতিনিয়ত মেকআপ করে থাকি মেকআপ রিমুভার করার জন্য আমাদের অলিভ অয়েল
দুর্দান্ত কাজ করে থাকে। এইচডি টক নরম করে এবং সেই সঙ্গে ত্বক থেকে মেকআপের
উপাদান তুলে ফেলতে সহায়তা করে। একটি ছোট কাপড় বা এক টুকরো পরিষ্কার তুলো
নিয়ে সেটি অলিভ অয়েলে ডুবিয়ে নিন সেটি দিয়ে ধীরে ধীরে ঘষে মেকআপ তুলে
ফেলুন । একটি করার পরে ভালো করে ফেসিয়াল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে
অনেকে স্ট্রেচ মার্ক সমস্যা নিয়ে ভোগেন । এটি মোটা থেকে চিকন হলে কিংবা
মাতৃত্বের পর এই সমস্যাটি আমরা বেশিরভাগ দেখতে পাই । এটি শরীরের ফাটা দাগ দূর
করতে বেশ কার্যকরী একটি উপাদান হলো অলিভ অয়েল । এই তেলটি স্ট্রেচ মার্কের
জায়গায় নিয়মিত মাসাজ করলে দ্রুতই দাগ দূর হবে।
অলিভ অয়েল খেলে
আমরা অনেকে অলিভ অয়েল খেয়ে থাকি। অনেকে রান্না করে বা অনেকে কোনো কিছুর
সাথে মিশে খেয়ে থাকে । যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এই তেলটি ।
শেষ মন্তব্যঃ শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়
শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলে ত্বক থাকে উজ্জ্বল এবং মোলায়েম।
প্রাকৃতিক উপাদান যেমন মধু, অলিভ অয়েল, আয়োডিন ও আমন্ড অয়েল ত্বকের
ন্যাচারাল আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। সঠিক পুষ্টি, হালকা স্কিন
ময়শ্চারাইজিং এবং পর্যাপ্ত পানি পান করাও গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের সুরক্ষা
নিশ্চিত করতে সানস্ক্রিন ব্যবহারও ভুলে গেলে চলবে না। সব মিলিয়ে,
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও ঘরোয়া উপায়গুলি ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অভিষেক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url