বাংলাদেশের উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাংলাদেশের জনগনের বিশাল অংশ তাদের জীবনধারণের জন্য কৃষির উপর নির্ভর করে। এ দেশের জিডিপিতে কৃষির অনেক অবদান রয়েছে।
আপনি যদি জানতে চান বাংলাদেশের উন্নয়নে কৃষি কি ভূমিকা রাখে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
ভূমিকা
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। বাংলাদেশের জনগনের বিশাল অংশ তাদের জীবনধারণের জন্য কৃষির উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের প্রধান ফসল হলো ধান। কিন্তু এখন কৃষকেরা পাট ও গম এর গুরুত্ব দিচ্ছে।ভালো ফলস ফলানর জন্য ভালো মাটির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের কিছু কিছু অঞ্চলে বছরে তিন বার ফসল উৎপাদন ও চাষাবাদ হয়ে থাকে। কৃষি ও কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে কৃষির অনেক অবদান রয়েছে।
বাংলাদেশের কৃষির বর্তমান অবস্থা
কৃষিতে বাংলাদেশ অন্য সব দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। তার কারণ বাংলাদেশের পলি মাটি। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী থেকে পলি এসে মাতিতে মিশে মাটিকে কৃষি মুখর করে তুলেছে। ঝড় বন্যা বৈরি পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ নিজেকে প্রমান করেছে। এর কারণ মাটি মাখা মানুষের ভালবাসা। ধান, গম, ভুট্টা উতপাদনে ক্রমেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। সবজি উৎপাদনে ৩ আর চাল ও মাছ উৎপাদনে এখন ৪ অবস্থানে আছে।
বাংলাদেশের কৃষির যান্ত্রিকীকরণ
ফসল আবাদে বাড়ছে কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার। ফলে বদলে যাচ্ছে কৃষির দৃশ্যপট। গ্রামীণ কৃষি পরিণত হচ্ছে এক আধুনিক কৃষিতে। এখন জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ধান কাটা মাড়াই, ঝাড়া ও শুকানো সবই হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কৃষি প্রবেশ করেছে যান্ত্রিক যুগে। এতে শুধু ফসল উৎপাদনের ব্যয়ই কমছে না, কমছে ফসল ঘরে তোলার সময়ও। সময়মতো ফসল সংগ্রহ করার ফলে হ্রাস পাচ্ছে সংগ্রহোত্তর ক্ষতি।
সাশ্রয় হচ্ছে কৃষকের সময়ও। হ্রাস পাচ্ছে কৃষকের কায়িক শ্রম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাচ্ছে ফসল। সংগ্রহোত্তর অপচয় হ্রাস পাওয়ায় বেশি ফসল পাচ্ছে কৃষক। উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকের লাভের পরিমাণ বাড়ছে। এতে প্রতি বছর শুধু বোরো ও আমন মৌসুমেই কৃষকের সাশ্রয় হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে খরপোশের কৃষি হচ্ছে আধুনিক ও ব্যাণিজিক।
আধুনিক কৃষি যন্তের নাম ও ব্যবহার
বর্তমানে কৃষি অনেকাংশে প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। ফসলের বীজগণ থেকে শুরু করে মারাই পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে থাকে। পিসিতে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কৃষিকাজ এসেছে অনেক পরিবর্তন। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফসল বীজ বিপণন ও সংরক্ষণ কে করেছে অনেক সহজতর। তাই আমাদের কৃষি সম্পর্কে প্রযুক্তি জ্ঞান থাকতে হবে।তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক কয়েকটি আধুনিক কৃষি যন্ত্রের নাম ও ব্যবহার।
ব্যাচ ড্রায়ারঃ ব্যাচ ড্রায়ার হলো একটি আধুনিক শস্যদানা শুকানোর একটি যন্ত্র। বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির ফলে ব্যাচ ড্রায়ার দিয়ে ধান, গম ,ভুট্টা ইত্যাদি সহজে শুকানো হয়।আবহাওয়া বৈরতার কারণে বা ঠিকমতো সূর্য না দেখা গেলে উল্লেখিত দানাদার শস্য গুলো মারাত্মক ক্ষতি হয়। কেননা শস্য দানা ঠিক মতন শুকিয়ে না রাখলে তার সংরক্ষণ করা যায় না। এজন্য যন্ত্রের সাহায্যে ফসল শুকানোর দরকার হয়।
মারাই কলঃফসল মারাই করার ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার আমাদের দেশে চালু হয়েছে।ধানসহ অন্যান্য দানাদার শস্য মাঠ থেকে কেটে এনে ভালোভাবে মাড়াই করে সংরক্ষণ করতে না পারলে কৃষক তার কাঙ্খিত ফল থেকে বঞ্চিত হয়।আধুনিক এমারায় যন্ত্র ব্যবহার করে ফসল মারায় কাজ খুব সহজে করা যায়। এক্ষেত্রে সময়ও শক্তি উভয় বাঁচে। মাড়াই করার এ যন্ত্রটিকে মারাই কল মারাই যন্ত্র বলা হয়।
পাওয়ার রিপার মেশিনঃ বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ।প্রযুক্তি সময়কে করেছে যেমন লাঘব তেমন বিশ্বকে এনেছে হাতের মুঠোয়।হত্যা পরিবর্তন হয়েছে কৃষি সহ বিভিন্ন যন্ত্রে। উল্লেখ করা যায় পাওয়ার রিপার মেশিনের, যার সাহায্যে অল্প সময়ে ও অল্প পরিশ্রমে অধিক পরিমাণ শস্য কাটা যায়। এ যন্ত্র দিয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ বিঘা পর্যন্ত জমিতে ফসল কাটা যায়।
হাইড্রো টিলার মেশিনঃ ফসল উৎপাদনে আগাছা একটি বিরাট অন্তরায়। ফসলি জমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত ফলন আশা করা যায় না। উৎপাদনে স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক কাদা ও পানি যুক্ত মাঠে চাষাবাদ করে জমির আগাছা কেটে মাটিতে মিশিয়ে সবুজ শাক তৈরি করতে সক্ষম।
কৃষিক্ষেত্রে কম্পিউটার
সব মাটিতে লোহা,দস্তা, তামা, সোডিয়াম, ইত্যাদি সব উপাদান সমানভাবে থাকে না। অঞ্চল ভেদে অনুপাতের তারতম্য দেখা যায়। আবার সব ফসলের জন্য সব উপাদান সমান গুরুত্বপূর্ণ নয় নয়। তাই অঞ্চলভেদে ফসল কম বেশি হয়।একটা জমিতে দীর্ঘদিন একই ফসল চাষ করা হলে তাহলেও মাটির পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। তাই মাটির অবস্থা না বুঝে ফসল বুনলে কখনোই সর্বোচ্চ ফলন আশা করা যায় না। এজন্য বীজ বোনার আগে মাটির গুণগত মান পরীক্ষা করতে হয়। বর্তমানে মাটির গুণগত মান পরীক্ষার সব যন্ত্রপাতি কম্পিউটারাইজড।বাংলাদেশেও এ কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
খাদ্যশস্য
ধান ,গম, আম , পাট বাংলাদেশের প্রধান ফসল। সেচ সুবিধার প্রশারের ফলে অনেকে গম উৎপাদন ছেড়ে ভুট্টা উৎপাদনে বেশি ঝুকে পড়েছে। যা প্রধানত মুরগি খামারে ব্যাবহার হয়ে থাকে। ধান বাংলাদেশের প্রধান ফসল যার ২০০৫-২০০৬ সালে উৎপাদন ছিল ২৮.৮ মিলিয়ন মেট্রিকটন। গমের উৎপাদন ছিল ৯ মিলিয়ন মেট্রিকটন।
বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে ৪র্থ।ঘুম কম বাংলাদেশের কোন ফসল নয়। ১৯৮০ এর শেষের দিক থেকে গ্রামের এলাকায় অল্প পরিসরে এর উৎপাদন শুরু হয়। ৬০ এবং ৭০ এর দশকের চাহিদা বাড়তে থাকে কেননা সে সময় বৈদেশিক সাহায্যের অন্যতম উপকরণ ছিল গম। ১৯৮৫ অর্থবছরের রেকর্ড১.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন গম উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়। প্রায় অদ্ধ শতাংশ বমি উৎপাদন ছিল সেচ সুবিধায় যুক্ত জমিতে। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত গম চাষের জমির পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে যা কিনা মোট চাষযোগ্য জমির ৬ শতাংশের কিছু কম।
আমদানিকৃত খাদ্যের বেশির ভাগই হচ্ছে গম যা প্রতিবছর এক মিলিয়ন টন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ১৯৮৪ ১৯৮৫ এবং ১৯৮৬ অর্থবছরের যা ১.৮ মিলিয়ন টন ছাড়িয়ে যায়। খাদ্য সর্ষের উৎপাদন মূলত দেশেও চাহিদা মেটাতে হয়ে থাকে। সীমিত পরিমাণে কিছু শতাংশ বাণিজ্যিক ভিত্তি করা হয়ে থাকে।
দেশীয় চাহিদা মেটাতে উৎপাদিত খাদ্য শস্যের মধ্যে রয়েছে আলু ও মিষ্টি আলু।১৯৮৪ অর্থবছরে উভয়ের মোট রেকর্ড উৎপাদন পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার টন।এছাড়া উৎপাদিত ফলের মধ্যে রয়েছে আম,কলা, কাঁঠাল এবং আনারস।চিনির বাৎসরিক উৎপাদনের পরিমাণ ৭ মিলিয়ন টন এর বেশি।অপরিশোধিত আখ গুড় নামে পরিচিত দেশীয় বাজারে বিকৃত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে কৃষির গুরুত্ব
বাংলাদেশে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। কারণ এটি কৃষি প্রধান দেশ।দেশের প্রায় সব লোক কৃষির সাথে জড়িত। ফসল উৎপাদন যদি কমে যায় তাহলে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিবে। তখন দেশের জনগন না খেতে পেয়ে বিভিন্ন রোগে অসুস্থ হয়ে যাবে। যদি চাষ -বাশ কমে যায় তাহলে দেশের জিডিপি মাত্রা কমে যাবে। যার ফলে দুরবিক্ষ দেখা দিতে পারে।এসব দিক বিবেচনা করে দেশে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা
বাংলাদেশ মুলুত কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত।বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক লোক কৃষির শাতে জড়িত। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা অনেক। আমরা যা উৎপাদন করি তা দিয়ে আমাদের চাহিদা মিটিয়ে বাকি ফসল গুলু বাহিরের দেশে রপ্তানি করা হয়। যা থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়।যা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগে। আমাদের দেশে সারা বছর কোনো না কোনো ফসল ফলানো হয়। তাই আমাদের চাহিদার কমতি হয় না। কৃষি খাত থেকে প্রতি বছর ভালো পরিমান জিডিপি অর্জন হয়।
লেখকের মন্তব্য
আমি মনে করি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কৃষি একটি গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে। কারণ কৃষিখাত যেমন আমাদের খাদ্য চাহিদা মিতে তেমন দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সাহায্য করে।প্রতিবছর ফসল রফতানি করে ভালো পরিমান অর্থ উপার্জন হয়। তাই আমি মনে করি কৃষি আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অভিষেক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url