কলা খাওয়ার উপকারিতা ও খালি পেটে কলা খেলে কি হয়
বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন খাবার তালিকাই একটি করে কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কিন্তু কলা সম্পকে অনেকের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে তাই অনেকেই কলা খায় না।
পেজ সূচিপত্রঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা ও খালি পেতে কলা খেলে কি হয়
কলা খাওয়ার উপকারিতা
আপনাদের মধ্যে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে কলা খাওয়ার কোনো উপকারিতা আছে কিনা? বা
কলা কলা থেকে কি উপকার পাওয়া যায়। তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি। আমাদের শরীর সুস্থ
রাখতে কলা একটি উপকারি ফল। কলা খেলে ত্বক ভালো থাকে পাশাপাশি ওজন কমে।
আমরা অনেকেই জানি কলাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের শরীর ভালো
রাখতে সাহায্য করে। কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। নিয়মিত কলা খেলে আমাদের
শরীরের অনেক উপকার হয়। আসুন জানা যাক কলা খেলে আর কি কি উপকার পাওয়া যায়।
লবণের ভারসাম্যঃ নিউইর্কের পুষ্টি বিভাগের পরিচালক সেলিন বিচম্যান
বলেন, প্রতিদিন খাদ্য তালিকাই পটাসিয়াম থাকা স্বাস্থ্যর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এছারাও বেশি গুরুত্বপূর্ণ যদি খাবারে লবণের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। কলাতে
প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম পাওয়া যায়। যার ফলে এটি সোডিয়াম এর খারাপ প্রভাব গুলু
কমাতে সাহায্য করে।
আমরা অনেকেই জানি যে লবণে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম পাওয়া যায়। উনার মতে,
আমাদের শরীরের রক্তচাপ ও হার্ট এর সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন এর খাদ্য
তালিকাই ভালো মাত্রাই পটাসিয়াম খাওয়া উচিৎ। প্রতিদিন খাদ্য তালিকাই পটাসিয়াম
রাখলে এটি আমাদের স্টোকের এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ওজন নিয়ন্ত্রনঃ কলাতে অন্যান্য ফলের চাইতে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় চিনি ও
ক্যালারি। তবে কলাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় আশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যার
ফলে নিয়মিত কলা আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তাই প্রতিদিন খাবারের মাঝে হালকা
খাবার হিসেবে আপনি কলা খেতে পারেন।
তকঃ কলা খেলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে। কারণ আমাদের ত্বক ভালো রাখতে
ম্যাঙ্গানিজ এর ভুমিকা অপরিসী। আর কলাতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়।
যা আমাদের ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। আমাদের ত্বকে অনেক ধরনের
রেডিক্যাল পড়ে ত্বক নষ্ট হয়ে যায়। তাই কলা আমাদের ত্বক ঠিক রাখতে ভালো ভুমিকা
রাখে। গবেষণা দেখা গেছে, একটি কলাতে পাওয়া যায় প্রায় ১৩% ম্যাঙ্গানিজ। যার ফলে
এটি আমাদের প্রতিদিন খাবারের ম্যাঙ্গানিজের যথেষ্ট চাহিদা পূরণ করে।
এনারজিঃ অনেক সময় আমাদের শরীরের ওজন কমে যাচ্ছে ও শরীর টা খুব দুর্বল হয়ে
পড়ছে। এবং দেখা যায় শরীরে কোনো শক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। সে সময় আপনি একটি কলা খেতে
পারেন যা আপনার শরীরে এনার্জি এনে দেবে।
হাড় শক্তঃ কলাতে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা
আমাদের শরীরের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে;
হজমঃ কলাতে পাওয়া যায় প্রায় ৩ গ্রামের মতো ফাইবার। যার ফলে এটি
আমাদের দ্রুত হজমে সাহায্য করে। তাছাড়া কলা পেট পরিস্কার করতে সাহায্য করে।
ভিটামিনঃ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এছাড়াও
ক্যারোটিনয়ডের মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যার ফলে আমাদের শরীরের অনেক ধরনের উপকার
করে থাকে।
ভিটামিন বি৬ঃ করাতে পাওয়া যায় ভিটামিন বি৬। এবং ভিটামিন বি৬ আমাদের
শরীরে অনেক ধরনের কাজ করার জন্য খুব কার্যকরী একটি উপাদান। শরীরের রোহিত কণিকা
তৈরি করতে সাহায্য করে এই ভিটামিন। এবং আমাদের শরীরের শক্তি তৈরি করতে সাহায্য
করে ভিটামিন বি৬। আপনার শরীরে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি৬ দিতে চাইলে
অবশ্যই নিয়মিত একটি করে কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ভিটামিন সিঃ আমরা অনেকে জানি ভিটামিন সি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক শক্তিশালী হলে
যে কোন রোগ জীবাণু আমাদের শরীরের সহজে প্রবেশ করতে পারে না। তাই আমাদের
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার রাখা প্রয়োজন। কলাতে পাওয়া
যায় ভিটামিন সি। তাই প্রতিদিন একটি করে কলা খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বেড়ে যাবে।
কিডনিঃ প্রতিদিন নিয়ম করে একটি করে কলা খেলে এটি আমাদের কিডনি ভালো
রাখতে সাহায্য করে।
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারলাম কলা খাওয়ার উপকারিতা। অর্থাৎ কলা খেলে
আমাদের শরীর এবং ত্বক উভয়ই ভালো থাকে। সাথে ওজন নিয়ন্ত্রণে আপনি কলা খেতে
পারেন।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা বলতে শুনি "রাতে কোন ধরনের ফল খেতে হয় না "। বিশেষ করে এই কথাটি বলতে
শুনি বয়স্ক লোকদের মুখে। অনেকেই বলেন রাতে কলা খাওয়া একেবারে স্বাস্থ্যসম্মত
না। কিন্তু আপনি জানেন কি রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা কি? চলুন জেনে নিই তাহলে এ
সম্পর্কে বিস্তারিত।
কলাতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। তাই কলা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য
খুব উপকারী একটি ফল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাতে ফল ফল খেলে আমাদের স্বাস্থ্য ক্ষতি
হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
কিন্তু একটি কথা মাথায় রাখতে হবে কলা হলে একটি ঠান্ডা জাতীয় ফল। যাদের ঠান্ডা
জাতীয় সমস্যা রয়েছে তাদের রাতে কলা খাওয়া উচিত না। কলা খেলে আমাদের শরীরে
ক্লান্তি বোধ হয়।
পুষ্টিবিদ্যার মতে, অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকর ফল হল কলা। কলা আমাদের দেহে শক্তি
উৎপাদন করে। এটি ব্যায়ামের পরে এবং সকাল বিকাল খাবারের পর খেলে কোন সমস্যা
নেই।রাতে কলা খাওয়ার একটি বিশেষ উপকার রয়েছে। উপকারটি হল, কলাতে পাওয়া যায়
অনেক পটাশিয়াম। যার ফলে এটি আমাদের শরীরে গভীর ঘুমের জন্য খুব উপকারী। পটাশিয়াম
আমাদের শরীরের পেশিকে আরাম দেই।
আপনি যদি বিকেলে বা রাতে একটি করে কলা খান তাহলে আপনার ঘুম ভালো হবে। যাদের রাতের
বেলায় মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তারা নিঃসন্দেহে কলা খেতে
পারেন। কারণ কলা একটি মিষ্টি জাতীয় ফল।অর্থাৎ রাতে ফল খেলে সাধারণত কোন সমস্যা
নেই। কিন্তু ঠান্ডা বা সর্দি লেগে থাকলে সে সময়টিতে কলা না খাওয়া উচিত।
কলা খেলে কি ওজন বাড়ে
অনেকে ভাবেন কলা খেলে ওজন বেড়ে যাবে। অর্থাৎ তারা কলা কে ওজন বাড়ানোর ফল
হিসাবে ধরে। যার ফলে দেখা যায় অনেকেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কলা খায় না।
কিন্তু আপনি কি জানেন? কলাতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ক্যালরি যার ফলে এটি আমাদের
ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।চিকিৎসকদের মতে, আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে
প্রতিদিন ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন। তারা নিয়মিত কলা খাওয়ার কথা বলে থাকেন।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, কলায় পাওয়া যায় কম স্বাস্থ্যকর ক্যালোরি এবং
উচ্চমাত্রার ফাইবার। যার ফলে এটি আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কলা
শরীরের অতিরিক্ত ওজন বাড়ায় না। যেহেতু কলাতে রয়েছে ফাইবার যার ফলে একটি কলা
খেলে এটি আপনার পেট অনেকক্ষণ ধরে ভরিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। এবং কলা হজম শক্তি
বাড়ায়।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। যেমন কলাতে পাওয়া যায় উচ্চ
কার্বোহাইড্রেট এবং বিভিন্ন ভিটামিন। এছাড়াও পাওয়া যায় পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ
এর মত উপাদান। তাই গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীর যে শক্তির প্রয়োজন তা পূরণ করে
কলা। এছাড়াও গর্ভবতী নারীদের জন্য কলার উপকার গুলো আলোচনা করা হলো।
অসুস্থতা দূর করেঃ গর্ভবতী নারীদের গর্ভচলাকালীন অবস্থায় বমি বমি ভাব
আসে। তাই গর্ভবতী নারীরা যদি প্রতিদিন একটি করে কলা খায় তাহলে তাদের এই বমি
বমি সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
গ্যাস্ট্রিকঃ কলাতে পাওয়া যায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মত উপাদান।
তাই কলা বুক জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। অর্থাৎ গর্ভবতী নারীদের
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে কলার গুরুত্ব অপরিসীম।
ওজন নিয়ন্ত্রণঃ গর্ভবতী নারীরা এ সময়ে তাদের ওজন তুলনামূলক বৃদ্ধি
পায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপনি প্রতিদিন একটি করে কলা খেতে পারেন।
কলাতে রয়েছে স্বাস্থ্য ক্যালরি যা ওজন নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে।এছাড়াও
গর্ভাবস্থায় কলা খেলে মা এবং সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
খালি পেটে কলা খেলে কি হয়
কলা একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর খাবার। প্রতিদিন কলা খেলে আমাদের শরীরের
রক্তচাপ, পানির ভারসাম্য এবং ভিটামিন সি এর চাহিদা এছাড়াও পেশার টান, ওজন
নিয়ন্ত্রণ ও ত্বক ভালো রাখতে কলা খুব উপকারী একটি ফল । কিন্তু খালি পেটে কলা
খেলে কি হয় এ সম্পর্কে হয়তো অনেকের জানা নেই। যার ফলে আমরা অনেক সময় খালি
পেটেকলা খেয়ে বসি। চলুন জেনে নিই খালি পেটে কলা খাওয়া যাবে কিনা।
পুষ্টিবিদবিজ্ঞানী মায়েং এর মতে, যে কলাগুলোত পাকা এবং কাঁচা অবস্থায় থাকে সে
কলাতে পাওয়া যায় রেজিস্ট্যান্ট স্টাচ ও শ্বেতসার। তাই কলা যত বেশি পাকা হবে এর
আঁশের পরিমাণ তত কমে যাবে। যার ফলে কলাতে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাবে।
তাই সকালে খালি পেটে আপনি যদি একটি পাকা কলা খান তাহলে আপনার রক্তে শর্করার
পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে। রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে
ক্লান্তি অনুভব হয়। এজন্য পুষ্টিবিদরা বলেন, সকালে খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত
না।
মায়েং এর মতে, উনি বলেন মানবদেহে স্বাভাবিকভাবে সকালবেলায় দেহ আমাদের শরীরে
রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে। আর যাদের ডায়াবেটিস নাই তাদের শরীরে বেশি
পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদন করে। তাই সকাল বেলাতেই খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত না। উনি
আরো বলেন, শুধুমাত্র কলাই না অন্যান্য ফল ও সকাল বেলায় খালি পেটে খাওয়া উচিত
না।প্রতিদিন দুপুরবেলায় খাবারের আগে কলা খাওয়া উচিত।
আমাদের শেষ কথা
আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা জানলাম কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পকে। আপনি যদি
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আপনি সব বুঝতে পারবেন। আমি মনে করি
কলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে যা শরীরের অনেক উপকার করে। আমরা যদি প্রতিদিন
নিয়ম করে খাবার তালিকাই কলা খায় তাহলে আমাদের অনেক উপকার হবে। তাই আপনারা চেষ্টা
করবেন প্রতিদিন খাবার তালিকাই যাতে কলা থাকে।
অভিষেক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url